জুলুমবাজরা সমাজে অভিশপ্ত,তবোও থামছে না জুলুম।

জুলুমবাজরা সমাজে অভিশপ্ত,তবোও থামছে না জুলুম।
মাহফুজ রাজা, কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :
“সমাজ আজ গুমরো মলিন,
দাপটিদের রোষানলে।
কাঁদবেরে আর কতদিন,
এরা কি মানুষ না গরিব বলে”
নাটক সিনেমায় যখন অসহায় মানুষের উপর নিপীড়নের চিত্র দেখা যায়,দর্শকদের চোখের পানি আড়াল করা যায় না,আবার জুলুমবাজদের জুলুম যখন চরমে হয় যা সহ্য সীমার বাহিরে দর্শক নিজেকে ধরে রাখতে না পারলে তাৎক্ষণিক মনে করে নেন এটা অভিনয় বাস্তব না।কিন্তু অন্তর্ফাটা আর্তচিৎকারের মত বহু ঘটনা দৈনন্দিন হচ্ছে একটু চোখের নজর প্রসারিত করলেই পাওয়া যায়,যা নাটক বা সিনেমাকেও হার মানায়।বদমেজাজের অনুকূলে নিয়ে গেছে সমাজ ব্যবস্থা যার সঙ্গ দিচ্ছে হয়ত বহু নির্ভরশীল ব্যক্তিরা।দেখেও না দেখার ভান করে আছে কর্তাশ্রেণীয় ব্যক্তিরা।
জুলুম একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো নির্যাতন বা অবিচার। সাধারণ অর্থে কাউকে অন্যায়ভাবে শারীরিক, মানসিক, আর্থিক বা যেকোনো পন্থায় অবিচার বা নির্যাতন করাকে জুলুম বলে।জুলুম একটি সামাজিক ব্যাধি। পরিবার, সমাজের সর্বত্র বর্তমানে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে এটি।
জুলুমবাজরা মনে করেন যতদিন দেহে শক্তি আছে ততদিন শক্তি প্রয়োগ করে যাবো যা হবার পরে হবে কিন্তু একটিবারের জন্যও চিন্তা করেনা জুলুম করে পৃথিবীর বুকে কেউ টিকে থাকতে পারেনি,তাছাড়া বেঁচে থাকতে হয় মানুষের ঘৃনার পাত্র হয়ে এটাকে জীবন বলেনা।পৃথিবীময় যত রকম ক্ষমতা বিদ্যমান আছে কোনো ক্ষমতাই দীর্ঘস্থায়ী নয়।
অন্যের ওপর অন্যায় অবিচার করে নিজের পতন ও ধ্বংস ডেকে আনে জালিমরা। বিপদ-আপদে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো জুলুম। বর্তমান পৃথিবীজুড়ে চলছে জুলুমের ভয়ঙ্কর প্রতিযোগিতা। চার দিকে একটি দৃশ্য ফুটে উঠছে- দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার। ব্যক্তি থেকে গোষ্ঠী এই জুলুমে লিপ্ত। জালিম যখন দুর্বলের প্রতি তার অত্যাচার চালায় তখন সে মনে করে, সে-ই বুঝি অনেক ক্ষমতাবান। তার শক্তি ও ক্ষমতা চিরস্থায়ী। কিন্তু সে ভুলে যায়- ওই অসহায় লোকটির পক্ষে কেউ না থাকলেও আল্লাহ সবই দেখেন ও হিসাব রাখেন। পৃথিবীতে জালেমের অন্যায়-অত্যাচার আর অবৈধ শক্তির ভয়ে মানুষ আতঙ্কিত ও ভীত থাকে। কত অসহায় মানুষ দু’হাত তুলে জালেমের ধ্বংস প্রার্থনা করেন। আর মজলুমের বদ দোয়া আল্লাহ কখনো ফিরিয়ে দেন না।জুলুম এক অমার্জনীয় অপরাধ। যার শাস্তিও অনিবার্য ও ভয়াবহ।
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর কাছ থেকে ফেরত আসে না। এক. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া। দুই. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া। তিন. মজলুমের দোয়া। আল্লাহ তাআলা তাদের দোয়া মেঘমালার ওপরে তুলে নেন এবং তার জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেন। মহান রব বলেন, আমার সম্মানের শপথ, কিছুটা বিলম্ব হলেও আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৯৮)
মানুষের অধিকার হরণ করা ও তাদের ধন-সম্পদ আত্মসাৎ করা অনেক বড় জুলুম। এই ধরনের জুলুমের কারণে পুরো পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। শান্তি ও সম্প্রীতি বিনষ্ট হচ্ছে। বিত্তবানরা দারিদ্র্য শ্রেণিকে ও ক্ষমতাবানরা সাধারণ লোকের প্রতি হিংসার বশবর্তী হয়ে নির্যাতন, নিপীড়ন করে। ফলে একসময় জালিম বা অন্যায়কারীর জীবনে নেমে আসে নানা বিপদ-আপদ। যারা মানুষের ওপর জুলুম করে এবং প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তাদের ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা মানুষকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাআলা তাদের শাস্তি প্রদান করবেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৬১৩)।
পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা জুলুমের ব্যাপারে মানবজাতিকে সতর্ক করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘অচিরেই জালিমরা জানতে পারবে, তাদের প্রত্যাবর্তনস্থল কোথায় হবে।’ (সুরা : শুআরা, আয়াত : ২২৭)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জালিমরা কখনো সফলকাম হয় না।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৫৭)
জুলুমের পরিণাম খুবই ভয়াবহ। জুলুম এমন একটি অন্যায় কাজ, যার শাস্তি আল্লাহ তাআলা ইহকালেও দিয়ে থাকেন। জালিমের বিচার শুধু কিয়ামতের দিবসেই হবে না, বরং দুনিয়া থেকেই আল্লাহ তাআলা তাদের জুলুমের প্রতিদান দেওয়া শুরু করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুটি পাপের শাস্তি আল্লাহ তাআলা আখিরাতের পাশাপাশি দুনিয়ায়ও দিয়ে থাকেন। তা হলো, জুলুম ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শাস্তি।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৫১১)

আপনি আরও পড়তে পারেন